গরজীবনে দিনের শুরুটা যেমন হয় বায়ুদূষণ আর নাগরিক যানজট দিয়ে, শেষটাও সেরকম হয়। নগরজীবনে ইট-পাথরের বদ্ধ ঘর থেকে বের হয়ে যদি প্রকৃতির নির্মল আবেশে যেতে চান, তবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের শমশেরনগর গলফ ক্লাব থেকে। আর খরচের চিন্তা করতে হবে না তেমন, মাত্র ৬০০ টাকার ভেতরে ভালোভাবেই ঘুরে আসতে পারবেন।

ফজরের আজানের সুমধুর কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে। সূর্যদেব তার নয়ন তখনো মেলেনি। আমরা নিদ্রা ভঙ্গ করে নতুন গন্তব্য পানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। আমাদের আজকের গন্তব্য সিলেটের ভানুগাছে। সকাল বেলার ট্রেনে চেপে যেতে হবে গন্তব্য পানে। এরপরও মানে দিবা দ্বিতীয় প্রহরেও ট্রেন আছে কিন্তু যত আগে ভানুগাছ পৌঁছতে পারব তত বেশি সময় পাব ঘুরার জন্য। তাই সেই ভোর ছয়টা পঁয়ত্রিশের পারাবত ট্রেনই আমরা বেছে নিলাম।

আমরা বের হলাম আমাদের অস্থায়ী ডেরা থেকে। রাস্তায় জনমানবের পদচারণা নেই বললেই চলে। কিছু সময় অপেক্ষা করতে হলো ত্রি-চক্রযানের জন্য। ত্রি-চক্রযানে চেপে এগিয়ে চললাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দিকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা পৌঁছলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। প্রথমে ভেবেছিলাম এত সকাল বেলা হয়তো যাত্রী কম হবে কিন্তু আমার ভাবনা ভুল; যাত্রীতে ভরপুর ট্রেনের বগি।

গলফের উদ্ভব

গলফের উদ্ভব নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। কোনো ঐতিহাসিকের মতে প্রাচীন রোমান খেলা পাগানিকা, যাতে অংশগ্রহণকারীরা একটি বেঁকানো লাঠি দিয়ে চামড়ার বল মারতে হতো, সেখান থেকে গলফের উদ্ভব। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানদের সঙ্গে এই খেলা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে আজকের গলফে রূপ নেয়।  অন্যদের মতে, অষ্টম ও চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে চীনের চুইওয়ান (চুই মানে ‘মারা’ ও ওয়ান মানে ‘ছোট বল’) খেলাই গলফের পূর্বসূরি। মধ্যযুগে এই খেলা ইউরোপে যায়। ইংল্যান্ডের ক্যাম্বুকা বা ফ্রান্সের ক্যাম্বট আর একটি প্রাচীন খেলা, যার সাথে গলফের সাযুজ্য আছে। পরে এই খেলা ‘পেল মেল’ নামে ছড়িয়ে পড়ে। কারো মতে, পারস্যের ‘চুঘান’ থেকে গলফের সৃষ্টি। ওদিকে, হল্যান্ডের লোনেনে পঞ্চম ফ্লোরিসের খুনির ধরা পড়ার দিনটি মনে রাখতে ‘কোলভেন’ নামে বাঁকা লাঠি ও বলের একটি বার্ষিক খেলা প্রচলিত ছিল ১২৯৭ সাল থেকে। তবে বহুল স্বীকৃত মত অনুযায়ী, আজকের গলফের উদ্ভব দ্বাদশ শতাব্দীর স্কটল্যান্ডে। সেখানে আজকের সেন্ট অ্যান্ড্রুজের পুরোনো মাঠে মেষপালকেরা খরগোশের গর্তে লাঠি দিয়ে মেরে পাথর ঢোকাত।

যা দেখবেন

চলতি পথে দেখতে পাবেন চা-বাগানের কর্মীরা চা-পাতা তুলছেন। কোথাও কোথাও চা-গাছের নতুন চারা গজিয়েছে। চা-বাগানের সবুজ সতেজ দৃশ্য আপনার যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর করে দেবে। গলফ মাঠকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজ ঘাসের গালিচা। এখানে চারটি মাঠ আছে। মাঠের পাশে বসার জন্য বেঞ্চ করে দেওয়া আছে। কিছু দূরে যেতেই দেখা পাবেন  লেকের। লেকের জলে ভেসে আছে পদ্মফুল। রোদের ঝলকানি আর তার মাঝে লেকের জলে পদ্মফুলের মিতালি—এ এক অপরূপ দৃশ্য।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের যেকোনো স্থান থেকে ট্রেনে বা সড়কপথে সরাসরি শমশেরনগর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে আন্তনগর উপবন ট্রেনে সরাসরি শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে নামা যাবে। এ ছাড়া আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে সাত কিলোমিটার দূরের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনে নেমেও যেতে পারেন শমশেরনগর। আন্তনগর পারাবত ট্রেনে শ্রীমঙ্গল অথবা কুলাউড়া স্টেশনে নেমেও যাওয়া যাবে। সেখান থেকে শমসেরনগর গলফ গ্রাউন্ডে যাওয়া যাবে দ্রুত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here